Sunday 22 December 2024


সম্পাদকীয়

প্রখ্যাত বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী সংবর্ধিত হয়েছিলেন বর্ধমান টাউন হলে

2024-08-17

প্রখ্যাত বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী সংবর্ধিত হয়েছিলেন বর্ধমান টাউন হলে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই ফেব্রুয়ারি বুধবার বৈকাল তিন ঘটিকায় বর্ধমান টাউন হলে সংবর্ধিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী মহাশয়। ঐদিন ই বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে সকাল এগারোটায় বাম ৭০ মাইল ,বাইপাসের ধারে (বর্তমানে উল্লাস উপনগরী) একটি মাদ্রাসা ও মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। উক্ত মাদ্রাসার নামকরণ ছিল "মাদ্রাসা কাঞ্জুল উলুম "অর্থাৎ জ্ঞানালয় বা উচ্চশিক্ষালয় যা আদতে বিশ্ববিদ্যালয়) মাদানী সাহেব ভুল ধরিয়ে দিলেন তিনি জানালেন এটি একটি সাধারণ মাদ্রাসা অর্থাৎ বিদ্যালয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না, এই কথা শুনে এলাকাবাসী ও জমিদাতা আনোয়ারা খাতুন ও আসগরি খাতুন নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। মাদানী সাহেব মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর ও মাদ্রাসার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী মোঃ হোসেনের পত্নী জমি দাতা আসগরি খাতুনের অনুমতি ক্রমে মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বীর সৈনিক হযরত সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী র স্মৃতির উদ্দেশ্যে নামকরণ করা হয় "বাম মাদ্রাসা হুসেনিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া"। এবং মসজিদের নামকরণ করা হয় মাদানী মসজিদ। বৈকাল তিন ঘটিকায় মাদানী সাহেবের গাড়ির কন ভয়ে ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে বর্ধমানের যুব বৃন্দ টাউন হল ময়দান ও হলে প্রবেশ করেন। কোনায় কোনায় লোকে লোকারণ্য তিল ধারণের জায়গা নাই , হল ছাপিয়ে গোটা মাঠে মানুষের মাথা গিজগিজ করছে । নির্দিষ্ট সময়ে সভা শুরু হয়, সংবর্ধিত হয়ে তিনি বক্তব্য রাখতে ওঠেন। বক্তব্যে উঠে আসে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পিছনে আলেমদের ও সাধারণ মুসলমানদের অবদানের কথা, রেশমি রুমাল অর্থাৎ রেশমপত্র যা ১৯১৩ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেওবন্দী নেতাদের কর্তৃক সুসংগঠিত আন্দোলনের কথা, জমিয়ত উলেমা ই হিন্দ ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যা একটি সর্বভারতীয় উলেমাদের পরিষদ এবং তাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে লড়াইয়ের ইতিহাস, তুলে ধরেন দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয় যার নাম দারুল উলুম দেওবন্দ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে মে উত্তরপ্রদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা এবং দেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক তৈরীর উদ্দেশ্যের কথা, উঠে আসে মাল্টার বন্দি- মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা। সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী (সাইখুল হাদিস অর্থাৎ হাদিস শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান এবং আমিরুল হিন্দ অর্থাৎ হিন্দুস্তানের নেতা) জন্ম ২ ই এপ্রিল ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে, অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদে, মৃত্যু ৬ ই ফেব্রুয়ারি ২০০৬ দিল্লি অ্যাপেলো হসপিটাল। সমাধি উত্তর প্রদেশ দেওবন্দে। পিতা - সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী- বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ইসলামিক পন্ডিত , ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করেন এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তার সম্মানে ডাক টিকিট বের করেন,(জন্ম ৬ ই ডিসেম্বর ১৮৭৯ মৃত্যু- ৫ ই ডিসেম্বর ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ। পুত্র - সাইয়্যেদ মাহমুদ মাদানী, ভাই- সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী। সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী ১৯৭৪ থেকে ১৯৮০, এবং ৮০ থেকে ৮৬ এবং ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ অর্থাৎ রাজ্য সভার সম্মানীয় সদস্য ছিলেন। রাজনীতি - ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। একদিকে ছিলেন রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতা , ইসলামিক চিন্তাবিদ,শিক্ষাবিদ- অধ্যাপক এবং সুসংগঠক, ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্পাদক। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর -দারুল উলুম দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ১২ বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, তারপর দীর্ঘদিন মদিনায় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক কারণে বসবাস করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে জমিয়ত উলামা ই হিন্দ উত্তর প্রদেশের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট সর্বভারতীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই আগস্ট সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ৩২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশী পূর্ব পাকিস্তানের অধুনা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন, সারাদেশে উদ্বাস্তুদের ত্রাণ শিবিরে পর্যাপ্ত খাদ্য বন্টন করতেন, পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় মুসলিম ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে দিল্লিতে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছিলেন, ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পূর্ব পাকিস্তান গিয়েছিলেন তারপর ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ সফর করেছেন ২০০৫ পর্যন্ত। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী সাহেবকে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর "বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননায়" ভূষিত করেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ ও ২৪ শ এপ্রিল সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর সম্মানে নয়া দিল্লিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছিল, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী সাহেবের সংসদীয় বক্তৃতা প্রকাশ করেছিলেন। তথ্যসূত্র- সেখ মনোয়ার হোসেন ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ১৬ ই ফেব্রুয়ারি দুটি অনুষ্ঠানেই উপস্থিত ছিলেন এবং ভাই সাইয়্যেদ আরসাদ মাদানী ও পুত্র সাইয়্যেদ মাহমুদ মাদানী সাহেবের সঙ্গে আলাপচারিতায় তথ্য সংগ্রহ। কিছু তথ্য গুগল থেকে সংগ্রহ। চিত্র গুগল থেকে সংগ্রহ । লিখেছেন ঐতিহাসিক, শিক্ষা দরদী সেখ মনোয়ার হোসেন, বর্ধমান। ১৭/৮/২৪ ।

বিপ্লবের প্রথম প্রহরে রাজনীতির ভাবনা: আরিফ আজাদ

2024-08-07

প্রথম প্রহরে রাজনীতির ভাবনা নিবন্ধে আজ এমনকিছু কথা লিখতে বসেছি যা আমাদের অনেকের মনঃপূত হবে না। মনঃপূত না হলেও আমরা পারস্পরিক সম্মানের জায়গা থেকে দ্বিমত করবো—এটাই এই স্বাধীনতার সৌন্দর্য। কথা বলতে পারার জন্যই তো এই স্বাধীনতা। শুরুতেই বলে রাখি, আমি একজন অরাজনৈতিক মানুষ। আমি কোনো দল করি না এবং কোনো দলের প্রতিনিধিত্বও করি না। তবে, মানুষ হিশেবে অরাজনৈতিক হলেও, আমি অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার লেখালেখি শুরু হয় রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যমে। ২০১২/২০১৩ সালের দিক থেকে যারা আমার লেখালেখির সাথে যুক্ত তারা জেনে থাকবেন সেটা। রাজনৈতিক সচেতনতার জায়গা থেকে তাই আজ কিছু কথা লিখে রাখতে চাই। দেশের অনেক জায়গায় অনেক হামলা, ভাঙচুর আর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এগুলো নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ আর আচরণ। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এই ধরণের ক্যাওয়াজ বেশ অবশ্যম্ভাবী। আটকানো যায় না কোনোভাবে। আমরা শ্রীলঙ্কায় দেখেছি। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন তারাও জানেন স্বাধীনতা পরবর্তী এই দেশে কীরকম অন্তর্কোন্দল আর হানাহানি, লুটতরাজ শুরু হয়েছিল। নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদের পতন পরবর্তী সময়েও সেটা দেখা গেছে। কিন্তু, এটা কেনো হয় জানেন? এটা হয় পাওয়ার ভ্যাকুয়ামের জন্য। ঠিক এই কারণে যতো দ্রুত অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে ফেলা যাবে, ততো দ্রুতই এর লাগাম টেনে ধরা যাবে। ততো দ্রুত সারাদেশে আইন এবং আইনি সংস্থা অ্যাক্টিভ করে ফেলা যাবে। এখানে আরো কতোকগুলো বিষয়াদি আছে। পাওয়ার ভ্যাকুয়ামের এই সময়টা একইসাথে ভাইটাল এবং ভোলাটাইল (গুরুত্বপূর্ণ এবং টালমাটাল)। কারণ, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে ঠিক, কিন্তু তার সকল সফট পাওয়ারগুলো দেশে বিরাজমান আছে। তারা জোরেশোরে চেষ্টা চালাবে দেশে অরাজকতা আর নাশকতা সৃষ্টি করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে এই বিপ্লব যারা করেছে দেশ বিদেশে তারা নাশকতাকারী বলে চিহ্নিত হয়। ফলে, শেখ হাসিনা যে এতোদিন বহির্বিশ্বকে বোঝাতো—সে না থাকলে দেশ মৌলবাদীদের খপ্পড়ে পড়ে ধ্বংস হবে, শেখ হাসিনার সেই দাবির পক্ষে প্রমাণ তৈরি হয়। সারাদেশে ঘটমান অরাজকতাগুলো যতোটা না পলিটিক্যালি মোটিভেটেড, তারচেয়ে বেশি এই ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই আমার বিশ্বাস। আফটারঅল, ভারত যে এতো সহজে এই হার মেনে নিবে সেটা কল্পনা করাটা বোকামি। সুতরাং, আমাদের প্রথম কাজ হলো এই সকল অরাজকতা, হানাহানি, মারামারি এবং ভাঙচুরগুলো থামানো। আর, যতো দ্রুত অন্তবর্তীকালীন সরকার আসবে, এটা ততো দ্রুত সহজ হবে। তাই, অন্তবর্তীকালীন সরকারই আমাদের মূল প্রায়োরিটি। দ্বিতীয়ত, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কেমন হবে? বাজারে যে ৩ থেকে ৫ বছরের কথা শোনা যাচ্ছে, তা কি যুক্তিযুক্ত? আমার মতে, অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি ৩ বা ৫ বছরের জন্য হয়, সেটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। মোটাদাগে এটা দেশের জন্য কল্যাণের হবে না। কেনো হবে না ব্যাখ্যা করি। দেশ পরিচালনার জন্য দরকার জনগনের ম্যান্ডেডে নির্বাচিত সরকার। নির্বাচিত সরকারের জন্য দরকার একটা ফ্রি এবং ফেয়ার ইলেকশান। অন্তবর্তীকালীন সরকার যতো স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষই হোক, মনে রাখতে হবে তারা ভোটে জয়ী হয়ে আসা সরকার নয়। দেশের আপামর জনসাধারণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় এই সরকার। অন্তবর্তীকালীন সরকার যেহেতু নির্বাচিত সরকার নয়, তাই দেশের প্রতিটা কোণের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ তার পক্ষে অসম্ভব হবে। দেশের গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা আর বিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজনৈতিক বিভাজনের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারে কেবলমাত্র সেই অঞ্চলের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু অন্তবর্তীকালীন সরকারের সেরকম প্রতিনিধি নেই এবং সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে গোটা দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শৃঙ্খলা তো আসবেই না, বরং ক্যাওয়াজ আরো বাড়বে। ১/১১ পরবর্তী সময়টা যারা দেখেছেন তারা জানেন এটার বাস্তবতা। দ্বিতীয় আশংকা হলো, এই অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য আসে, সেই সুযোগটা পুরোদমে নিতে পারে আওয়ামিলীগ। মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামিলীগের সমস্ত সফট পাওয়ার এখনো বিদ্যমান। দেশের সমস্ত ইন্সটিটিউশানে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যদিও এখন বোল পাল্টেছে। তারউপর, ভারত ভীষণভাবে তোড়জোড় চালাবে শেখ হাসিনা বা আওয়ামিলীগকে রি-ফর্ম করতে। অন্তবর্তীকালীন সরকার যেহেতু ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়, তাই দেশের মধ্যে নানান ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চাইবে। এই অস্থিতিশীলতায় ভুগতে ভুগতে জনগন ক্লান্ত হবে, বিরক্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাপকভাবে। ভেঙে পড়বে রাষ্ট্রের সকল ফাংশনাল ইন্সটিটিউশান। একদা মানুষের মনে হবে—‘শেখ হাসিনাই তো ভালো ছিলো’ (ইতোমধ্যে এই বয়ান বাজারে চালু হয়ে গেছে)। একদিকে আওয়ামিলীগ ও হাসিনার প্রতি একটা সিম্প্যাথি তৈরি করা হবে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ইন্সটিটিউশানে থাকা হাসিনার সফট পাওয়ারেরা ক্যু করে বসবে। ব্যস, পরেরদিন সকালে দেখতে পাবেন আওয়ামিলীগ আবার ক্ষমতায় এসে বসেছে। আপনি বলতে পারেন—এবার শেখ হাসিনাকে যেভাবে তাড়ানো হয়েছে, সেই জনগন তো আর হাওয়া হয়ে যায়নি। সকলে আবার রাস্তায় নামবে। আপনাদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলি—দুই বা তিন বছর তো বহু দূরে, ৫ ই আগষ্ট যে স্বতঃস্ফূর্ততায় মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, সেই মোমেন্টাম ইতোমধ্যেই অর্ধেক হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের আরেকটা গনজমায়েতের ডাক দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে বলুন। ঠিক এজন্যেই বলে—লোহা গরম বা তাঁতানো অবস্থায় থাকতেই বারি দিতে হয়। তৃতীয় আশঙ্কা হলো, শেখ হাসিনা সহ আওয়ামিলীগের সকল পলিসি মেকারেরা সেইফ এক্সিট পেয়েছে। এতো অত্যাচার, নির্যাতনের জন্য তাদের কি বিচার হওয়া উচিত ছিলো না? কিন্তু, কী উদ্দেশ্যে তাদেরকে সেইফ এক্সিট দেওয়া হলো? কারা দিলো তা তো আমরা দেখেছি—সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেওয়া সেনাবাহিনীকে নিয়েই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজকারবার হবে। যে সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে আওয়ামিলীগের সকল পলিসি মেকারেরা নির্বিঘ্নে সরে যেতে পেরেছে, আমাদের কি এই আশঙ্কাও করা উচিত না যে—সেই সেনাবাহিনী খুব করে চাইবে হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় পুনর্বহাল করতে? মোদ্দাকথা, আমার মনে হয় অন্তবর্তীকালীন সরক

ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছিল, কিন্তু শক্তি ছিল জনতার: ইকবাল হাসান জাহিদ

2024-08-07

আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা বাংলাদেশকে বিশ্ববেহায়া স্বৈরাচারী হাসিনার শাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে জয়লাভ করেছে। এর জন্যে দেশের বিপ্লবী ছাত্রজনতা ও তরুণ সমাজকে অভিনন্দন। এই বিপ্লব আর সংগ্রাম শুধুমাত্র ছাত্রদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে এই চিন্তা যদি কেউ করে থাকেন তাহলে ভুল করবেন! ছাত্রসমাজের ত্যাগ গত এক মাসের। কিন্তু এই ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসন আর জুলুম নিপীড়নের শিকার হয়ে গত ১৫ বছর থেকে বিভিন্নভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে এদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ইসলামী সংগঠন। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির অন্ততপক্ষে অর্ধলক্ষ লোক কারাবন্দী হয়ে জুলুম নির্যাতন খুন গুমের শিকার হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করার পর সারাদেশে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে গত ১৫ বছর যাবৎ। সবচে ভয়াবহ যে গণহত্যা করেছে খুনি হাসিনার সরকার তা হলো হেফাজতের নেতৃবৃন্দকে একরাতে টিভি টেলিভিশন বন্ধ করে হাজারের উর্ধে নিরীহ ছাত্র ও আলেমদেরকে ক্র‍্যাকডাউন করে শহীদ করে দিয়েছে। রাজধানীর শাপলাচত্বরকে রক্তের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। যে গণহত্যা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ এর আগে কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, শহীদ হেফাজত কর্মীদের লাশ গুম করেছে, তাদের সঠিক তালিকাটাও করতে দেয়নি ডাইনি হাসিনার সরকার। জমিয়ত, খেলাফত ও হেফাজতের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপর বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেল জুলুম নির্যাতন করেছে। ওলামায়ে কেরামকে গুম খুনের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অন্য দল থেকে বিভক্ত করিয়েছে। জেলের ভয় দেখিয়ে দ্বীনের দাওয়াত বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র চিহ্নিত বামঘরাণার পান্ডারা ছাড়া দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের এইসব জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দল ও ইসলাম পন্থীদের ত্যাগ বর্তমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে আমি কম্পেয়ার করব না, কিন্তু ছাত্রদের কেউ কেউ যদি মনে করে এই আন্দোলন শুধুমাত্র তাদেরই ত্যাগ আর অর্জন তাহলে তারা ভুল করবেন। গত ১৫ বছরে দ্যাশের মানুষ জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ জমা হয়েছিলো মূলত এরই ফসল। রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করেছিলো গণতন্ত্রের জন্যে, ছাত্ররা আন্দোলন করেছে তাদের চাকরিতে কোটা থেকে মুক্তির জন্যে। ছাত্রদের দাবীর চেয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর দাবীগুলো ছিলো সার্বজনীন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সফল হয়নি। কারণ তাদের আন্দোলন জমেনি। তারা তরুণ প্রজন্মকে স্বৈরাচারী সরকারের নেগেটিভিটি বুঝাতে সক্ষম হননি! ছাত্রদেরকে তাদের বৈষম্যের বিষয়ে জাগিয়ে তুলতে পারেননি। আম জনতাকে দুর্নীতি ও দু:সাশনের ব্যাখা দিয়ে জাগাতে পারেননি। অন্যদিকে সরকার তাদেরকে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রাজাকার কিংবা রাজাকারের দোসর ট্যাগ দিয়ে সকলকে একসাথে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। বিধায় রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনকে গণবিপ্লবে রুপ দিতে পারেননি ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছিলো কোটা বাতিলের জন্যে। ছাত্রদের আন্দোলন ফ্যাসিস্ট ডাইনির বিরুদ্ধে ছিল না। যার ফলে সরকার তাদেরকে লাই দিয়েছে। পাত্তা দেয়নি। ছাত্ররা ধীরে ধীরে ক্ষুব্ধ হয়েছে। জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে শুরু করেছে। এরপর তাদের আন্দোলন কোটা থেকে গড়িয়ে যায় জুলুমের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকার তখনও বুঝতে পারেনি এই জুলুম নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন অন্যদিকে গড়াতে পারে। তাই তখনও পাত্তা না দিয়ে সেই অভ্যাসবশত অহংকার আর ক্ষমতা দেখিয়ে মাস্তান ছাত্রলীগের কু কু র দের লেলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদের পেছনে। আন্দোলন যখন জুলুম নির্যাতন ও হামলা মামলা বিরোধী তখনও সরকার পাত্তা না দিয়ে লাইসেন্সধারি মাস্তান হারুনদের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে, আর অবৈধ পান্ডা মন্ত্রীদের দিয়ে হুমকি দিয়েছে। ছাত্ররা তখন বুঝতে পেরেছে কিংবা দেশের ডান বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ বুঝিয়ে দিয়েছেন এখন তোমরা দফা-১ এপ্লাই করো। আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। এর আগপর্যন্ত সাধারণ ছাত্রদের পেছনে থেকে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির ও অন্যান্য ইসলামী ছাত্র সংগঠনের ছাত্ররা শক্তি যোগাচ্ছে আন্দোলনের। কিন্তু দফা এক ঘোষণা করতেই এই আন্দোলন আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে যায় গোটা দেশের নির্যাতিত মজলুম মানুষদের মধ্যে। নানাভাবে যারা জুলুমবাজ স্বৈরাচারী হাসিনার আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন তারাও নেমে যান রাজপথে। ছাত্ররা আহবান করে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আলেম ওলামা, সাধারণ মানুষ সকল পেশাজীবিদের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে। বিএনপি ঘোষণা দেয় পাশে থাকবে। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও তারা মাঠে থাকার ঘোষণা দেয়। জমিয়ত, খেলাফত, চরমোনাই সরাসরি মাঠে এসে আন্দোলনে যোগ দেয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষণা দিয়ে তাদের পাশে দাড়ায়। সর্বসাধাণ যুক্ত হয়ে যাওয়ায় সরকার পড়ে যায় বেকায়দায়। ডাকতে শুরু করে ছাত্রদের। বসতে চায় সরকার প্রধান হাসিনা। কিন্তু তখন আর ছাত্রদের পেছনে তাকানোর সময় বাকি থাকেনি। শুরু হয় গণজোয়ার। সাধারণ ছাত্রজনতা ঘোষণা দেয় বঙ্গভবন ঘেরাও করবে। এক সময় এই জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যায় নিকৃষ্টতম খুনি হাসিনার মসনদ। হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। দেশ নতুন করে আবার স্বাধীন হয়। এই বিস্তারিত ঘটনার পর কোনো ছাত্র বা নির্দিষ্টগোষ্ঠী কখনও দাবী করতে পারেনা শুধুমাত্র ছাত্রদের আন্দোলন আর ত্যাগে ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন হয়েছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করে, হাজার শহীদ আলেমের ত্যাগ অস্বীকার করে শুধুমাত্র আন্দোলনকারী ছাত্রদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে কোনো সরকার গঠন করলে বে-ইনসাফি হবে। ইনসাফভিত্তিক দুর্নীতিমুক্ত একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই দেশের আপামর জনতার হৃদয়ের চাওয়া। আপাতত এই পর্যন্ত... ইকবাল হাসান জাহিদ বিভাগীয় সম্পাদক দৈনিক জালালাবাদ




Follow us on                  

About Us
Latest Bengal Today, a pioneering digital platform, is revolutionizing the way citizens access news, information, and services.
Contact Us
Address : Kolkata, Kolkata
Call : +91 75518 47049
WhatsApp : +91 75518 47049
Email : info@latestbengaltoday
Important Link
  • Disclaimer
  • Privacy Policy

  • Total Visitor : 21839