Sunday 22 December 2024
2024-08-07 | সম্পাদকীয় ,বাংলাদেশ | Latest Bengal Today | Views : 205
প্রথম প্রহরে রাজনীতির ভাবনা নিবন্ধে আজ এমনকিছু কথা লিখতে বসেছি যা আমাদের অনেকের মনঃপূত হবে না। মনঃপূত না হলেও আমরা পারস্পরিক সম্মানের জায়গা থেকে দ্বিমত করবো—এটাই এই স্বাধীনতার সৌন্দর্য। কথা বলতে পারার জন্যই তো এই স্বাধীনতা। শুরুতেই বলে রাখি, আমি একজন অরাজনৈতিক মানুষ। আমি কোনো দল করি না এবং কোনো দলের প্রতিনিধিত্বও করি না। তবে, মানুষ হিশেবে অরাজনৈতিক হলেও, আমি অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার লেখালেখি শুরু হয় রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যমে। ২০১২/২০১৩ সালের দিক থেকে যারা আমার লেখালেখির সাথে যুক্ত তারা জেনে থাকবেন সেটা। রাজনৈতিক সচেতনতার জায়গা থেকে তাই আজ কিছু কথা লিখে রাখতে চাই। দেশের অনেক জায়গায় অনেক হামলা, ভাঙচুর আর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এগুলো নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ আর আচরণ। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এই ধরণের ক্যাওয়াজ বেশ অবশ্যম্ভাবী। আটকানো যায় না কোনোভাবে। আমরা শ্রীলঙ্কায় দেখেছি। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন তারাও জানেন স্বাধীনতা পরবর্তী এই দেশে কীরকম অন্তর্কোন্দল আর হানাহানি, লুটতরাজ শুরু হয়েছিল। নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদের পতন পরবর্তী সময়েও সেটা দেখা গেছে। কিন্তু, এটা কেনো হয় জানেন? এটা হয় পাওয়ার ভ্যাকুয়ামের জন্য। ঠিক এই কারণে যতো দ্রুত অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে ফেলা যাবে, ততো দ্রুতই এর লাগাম টেনে ধরা যাবে। ততো দ্রুত সারাদেশে আইন এবং আইনি সংস্থা অ্যাক্টিভ করে ফেলা যাবে। এখানে আরো কতোকগুলো বিষয়াদি আছে। পাওয়ার ভ্যাকুয়ামের এই সময়টা একইসাথে ভাইটাল এবং ভোলাটাইল (গুরুত্বপূর্ণ এবং টালমাটাল)। কারণ, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে ঠিক, কিন্তু তার সকল সফট পাওয়ারগুলো দেশে বিরাজমান আছে। তারা জোরেশোরে চেষ্টা চালাবে দেশে অরাজকতা আর নাশকতা সৃষ্টি করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে এই বিপ্লব যারা করেছে দেশ বিদেশে তারা নাশকতাকারী বলে চিহ্নিত হয়। ফলে, শেখ হাসিনা যে এতোদিন বহির্বিশ্বকে বোঝাতো—সে না থাকলে দেশ মৌলবাদীদের খপ্পড়ে পড়ে ধ্বংস হবে, শেখ হাসিনার সেই দাবির পক্ষে প্রমাণ তৈরি হয়। সারাদেশে ঘটমান অরাজকতাগুলো যতোটা না পলিটিক্যালি মোটিভেটেড, তারচেয়ে বেশি এই ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই আমার বিশ্বাস। আফটারঅল, ভারত যে এতো সহজে এই হার মেনে নিবে সেটা কল্পনা করাটা বোকামি। সুতরাং, আমাদের প্রথম কাজ হলো এই সকল অরাজকতা, হানাহানি, মারামারি এবং ভাঙচুরগুলো থামানো। আর, যতো দ্রুত অন্তবর্তীকালীন সরকার আসবে, এটা ততো দ্রুত সহজ হবে। তাই, অন্তবর্তীকালীন সরকারই আমাদের মূল প্রায়োরিটি। দ্বিতীয়ত, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কেমন হবে? বাজারে যে ৩ থেকে ৫ বছরের কথা শোনা যাচ্ছে, তা কি যুক্তিযুক্ত? আমার মতে, অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি ৩ বা ৫ বছরের জন্য হয়, সেটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। মোটাদাগে এটা দেশের জন্য কল্যাণের হবে না। কেনো হবে না ব্যাখ্যা করি। দেশ পরিচালনার জন্য দরকার জনগনের ম্যান্ডেডে নির্বাচিত সরকার। নির্বাচিত সরকারের জন্য দরকার একটা ফ্রি এবং ফেয়ার ইলেকশান। অন্তবর্তীকালীন সরকার যতো স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষই হোক, মনে রাখতে হবে তারা ভোটে জয়ী হয়ে আসা সরকার নয়। দেশের আপামর জনসাধারণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় এই সরকার। অন্তবর্তীকালীন সরকার যেহেতু নির্বাচিত সরকার নয়, তাই দেশের প্রতিটা কোণের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ তার পক্ষে অসম্ভব হবে। দেশের গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা আর বিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজনৈতিক বিভাজনের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারে কেবলমাত্র সেই অঞ্চলের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু অন্তবর্তীকালীন সরকারের সেরকম প্রতিনিধি নেই এবং সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে গোটা দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শৃঙ্খলা তো আসবেই না, বরং ক্যাওয়াজ আরো বাড়বে। ১/১১ পরবর্তী সময়টা যারা দেখেছেন তারা জানেন এটার বাস্তবতা। দ্বিতীয় আশংকা হলো, এই অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য আসে, সেই সুযোগটা পুরোদমে নিতে পারে আওয়ামিলীগ। মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামিলীগের সমস্ত সফট পাওয়ার এখনো বিদ্যমান। দেশের সমস্ত ইন্সটিটিউশানে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যদিও এখন বোল পাল্টেছে। তারউপর, ভারত ভীষণভাবে তোড়জোড় চালাবে শেখ হাসিনা বা আওয়ামিলীগকে রি-ফর্ম করতে। অন্তবর্তীকালীন সরকার যেহেতু ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়, তাই দেশের মধ্যে নানান ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চাইবে। এই অস্থিতিশীলতায় ভুগতে ভুগতে জনগন ক্লান্ত হবে, বিরক্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাপকভাবে। ভেঙে পড়বে রাষ্ট্রের সকল ফাংশনাল ইন্সটিটিউশান। একদা মানুষের মনে হবে—‘শেখ হাসিনাই তো ভালো ছিলো’ (ইতোমধ্যে এই বয়ান বাজারে চালু হয়ে গেছে)। একদিকে আওয়ামিলীগ ও হাসিনার প্রতি একটা সিম্প্যাথি তৈরি করা হবে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ইন্সটিটিউশানে থাকা হাসিনার সফট পাওয়ারেরা ক্যু করে বসবে। ব্যস, পরেরদিন সকালে দেখতে পাবেন আওয়ামিলীগ আবার ক্ষমতায় এসে বসেছে। আপনি বলতে পারেন—এবার শেখ হাসিনাকে যেভাবে তাড়ানো হয়েছে, সেই জনগন তো আর হাওয়া হয়ে যায়নি। সকলে আবার রাস্তায় নামবে। আপনাদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলি—দুই বা তিন বছর তো বহু দূরে, ৫ ই আগষ্ট যে স্বতঃস্ফূর্ততায় মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, সেই মোমেন্টাম ইতোমধ্যেই অর্ধেক হয়ে গেছে। আন্দোলনকারীদের আরেকটা গনজমায়েতের ডাক দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে বলুন। ঠিক এজন্যেই বলে—লোহা গরম বা তাঁতানো অবস্থায় থাকতেই বারি দিতে হয়। তৃতীয় আশঙ্কা হলো, শেখ হাসিনা সহ আওয়ামিলীগের সকল পলিসি মেকারেরা সেইফ এক্সিট পেয়েছে। এতো অত্যাচার, নির্যাতনের জন্য তাদের কি বিচার হওয়া উচিত ছিলো না? কিন্তু, কী উদ্দেশ্যে তাদেরকে সেইফ এক্সিট দেওয়া হলো? কারা দিলো তা তো আমরা দেখেছি—সেনাবাহিনী। শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেওয়া সেনাবাহিনীকে নিয়েই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাজকারবার হবে। যে সেনাবাহিনীর ওপর ভর করে আওয়ামিলীগের সকল পলিসি মেকারেরা নির্বিঘ্নে সরে যেতে পেরেছে, আমাদের কি এই আশঙ্কাও করা উচিত না যে—সেই সেনাবাহিনী খুব করে চাইবে হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় পুনর্বহাল করতে? মোদ্দাকথা, আমার মনে হয় অন্তবর্তীকালীন সরক