Sunday 22 December 2024
2024-08-17 | সম্পাদকীয় ,দেশ | Latest Bengal Today | Views : 870
প্রখ্যাত বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী সংবর্ধিত হয়েছিলেন বর্ধমান টাউন হলে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই ফেব্রুয়ারি বুধবার বৈকাল তিন ঘটিকায় বর্ধমান টাউন হলে সংবর্ধিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী মহাশয়। ঐদিন ই বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে সকাল এগারোটায় বাম ৭০ মাইল ,বাইপাসের ধারে (বর্তমানে উল্লাস উপনগরী) একটি মাদ্রাসা ও মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। উক্ত মাদ্রাসার নামকরণ ছিল "মাদ্রাসা কাঞ্জুল উলুম "অর্থাৎ জ্ঞানালয় বা উচ্চশিক্ষালয় যা আদতে বিশ্ববিদ্যালয়) মাদানী সাহেব ভুল ধরিয়ে দিলেন তিনি জানালেন এটি একটি সাধারণ মাদ্রাসা অর্থাৎ বিদ্যালয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না, এই কথা শুনে এলাকাবাসী ও জমিদাতা আনোয়ারা খাতুন ও আসগরি খাতুন নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। মাদানী সাহেব মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর ও মাদ্রাসার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী মোঃ হোসেনের পত্নী জমি দাতা আসগরি খাতুনের অনুমতি ক্রমে মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করে প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বীর সৈনিক হযরত সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী র স্মৃতির উদ্দেশ্যে নামকরণ করা হয় "বাম মাদ্রাসা হুসেনিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া"। এবং মসজিদের নামকরণ করা হয় মাদানী মসজিদ। বৈকাল তিন ঘটিকায় মাদানী সাহেবের গাড়ির কন ভয়ে ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে বর্ধমানের যুব বৃন্দ টাউন হল ময়দান ও হলে প্রবেশ করেন। কোনায় কোনায় লোকে লোকারণ্য তিল ধারণের জায়গা নাই , হল ছাপিয়ে গোটা মাঠে মানুষের মাথা গিজগিজ করছে । নির্দিষ্ট সময়ে সভা শুরু হয়, সংবর্ধিত হয়ে তিনি বক্তব্য রাখতে ওঠেন। বক্তব্যে উঠে আসে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পিছনে আলেমদের ও সাধারণ মুসলমানদের অবদানের কথা, রেশমি রুমাল অর্থাৎ রেশমপত্র যা ১৯১৩ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেওবন্দী নেতাদের কর্তৃক সুসংগঠিত আন্দোলনের কথা, জমিয়ত উলেমা ই হিন্দ ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যা একটি সর্বভারতীয় উলেমাদের পরিষদ এবং তাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে লড়াইয়ের ইতিহাস, তুলে ধরেন দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয় যার নাম দারুল উলুম দেওবন্দ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে মে উত্তরপ্রদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা এবং দেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক তৈরীর উদ্দেশ্যের কথা, উঠে আসে মাল্টার বন্দি- মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা। সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী (সাইখুল হাদিস অর্থাৎ হাদিস শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান এবং আমিরুল হিন্দ অর্থাৎ হিন্দুস্তানের নেতা) জন্ম ২ ই এপ্রিল ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে, অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদে, মৃত্যু ৬ ই ফেব্রুয়ারি ২০০৬ দিল্লি অ্যাপেলো হসপিটাল। সমাধি উত্তর প্রদেশ দেওবন্দে। পিতা - সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী- বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ইসলামিক পন্ডিত , ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করেন এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তার সম্মানে ডাক টিকিট বের করেন,(জন্ম ৬ ই ডিসেম্বর ১৮৭৯ মৃত্যু- ৫ ই ডিসেম্বর ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ। পুত্র - সাইয়্যেদ মাহমুদ মাদানী, ভাই- সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী। সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী ১৯৭৪ থেকে ১৯৮০, এবং ৮০ থেকে ৮৬ এবং ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ অর্থাৎ রাজ্য সভার সম্মানীয় সদস্য ছিলেন। রাজনীতি - ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। একদিকে ছিলেন রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতা , ইসলামিক চিন্তাবিদ,শিক্ষাবিদ- অধ্যাপক এবং সুসংগঠক, ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্পাদক। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর -দারুল উলুম দেওবন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । ১২ বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, তারপর দীর্ঘদিন মদিনায় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক কারণে বসবাস করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে জমিয়ত উলামা ই হিন্দ উত্তর প্রদেশের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট সর্বভারতীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই আগস্ট সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ৩২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশী পূর্ব পাকিস্তানের অধুনা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন, সারাদেশে উদ্বাস্তুদের ত্রাণ শিবিরে পর্যাপ্ত খাদ্য বন্টন করতেন, পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় মুসলিম ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে দিল্লিতে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছিলেন, ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পূর্ব পাকিস্তান গিয়েছিলেন তারপর ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ সফর করেছেন ২০০৫ পর্যন্ত। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী সাহেবকে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর "বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননায়" ভূষিত করেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ ও ২৪ শ এপ্রিল সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর সম্মানে নয়া দিল্লিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছিল, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী সাহেবের সংসদীয় বক্তৃতা প্রকাশ করেছিলেন। তথ্যসূত্র- সেখ মনোয়ার হোসেন ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ১৬ ই ফেব্রুয়ারি দুটি অনুষ্ঠানেই উপস্থিত ছিলেন এবং ভাই সাইয়্যেদ আরসাদ মাদানী ও পুত্র সাইয়্যেদ মাহমুদ মাদানী সাহেবের সঙ্গে আলাপচারিতায় তথ্য সংগ্রহ। কিছু তথ্য গুগল থেকে সংগ্রহ। চিত্র গুগল থেকে সংগ্রহ । লিখেছেন ঐতিহাসিক, শিক্ষা দরদী সেখ মনোয়ার হোসেন, বর্ধমান। ১৭/৮/২৪ ।