Sunday 22 December 2024
2024-08-07 | সম্পাদকীয় ,বাংলাদেশ , | Latest Bengal Today | Views : 285
আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা বাংলাদেশকে বিশ্ববেহায়া স্বৈরাচারী হাসিনার শাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে জয়লাভ করেছে। এর জন্যে দেশের বিপ্লবী ছাত্রজনতা ও তরুণ সমাজকে অভিনন্দন। এই বিপ্লব আর সংগ্রাম শুধুমাত্র ছাত্রদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে এই চিন্তা যদি কেউ করে থাকেন তাহলে ভুল করবেন! ছাত্রসমাজের ত্যাগ গত এক মাসের। কিন্তু এই ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসন আর জুলুম নিপীড়নের শিকার হয়ে গত ১৫ বছর থেকে বিভিন্নভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে এদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ইসলামী সংগঠন। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির অন্ততপক্ষে অর্ধলক্ষ লোক কারাবন্দী হয়ে জুলুম নির্যাতন খুন গুমের শিকার হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করার পর সারাদেশে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে গত ১৫ বছর যাবৎ। সবচে ভয়াবহ যে গণহত্যা করেছে খুনি হাসিনার সরকার তা হলো হেফাজতের নেতৃবৃন্দকে একরাতে টিভি টেলিভিশন বন্ধ করে হাজারের উর্ধে নিরীহ ছাত্র ও আলেমদেরকে ক্র্যাকডাউন করে শহীদ করে দিয়েছে। রাজধানীর শাপলাচত্বরকে রক্তের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। যে গণহত্যা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ এর আগে কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, শহীদ হেফাজত কর্মীদের লাশ গুম করেছে, তাদের সঠিক তালিকাটাও করতে দেয়নি ডাইনি হাসিনার সরকার। জমিয়ত, খেলাফত ও হেফাজতের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপর বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেল জুলুম নির্যাতন করেছে। ওলামায়ে কেরামকে গুম খুনের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অন্য দল থেকে বিভক্ত করিয়েছে। জেলের ভয় দেখিয়ে দ্বীনের দাওয়াত বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র চিহ্নিত বামঘরাণার পান্ডারা ছাড়া দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের এইসব জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দল ও ইসলাম পন্থীদের ত্যাগ বর্তমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে আমি কম্পেয়ার করব না, কিন্তু ছাত্রদের কেউ কেউ যদি মনে করে এই আন্দোলন শুধুমাত্র তাদেরই ত্যাগ আর অর্জন তাহলে তারা ভুল করবেন। গত ১৫ বছরে দ্যাশের মানুষ জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ জমা হয়েছিলো মূলত এরই ফসল। রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করেছিলো গণতন্ত্রের জন্যে, ছাত্ররা আন্দোলন করেছে তাদের চাকরিতে কোটা থেকে মুক্তির জন্যে। ছাত্রদের দাবীর চেয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর দাবীগুলো ছিলো সার্বজনীন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সফল হয়নি। কারণ তাদের আন্দোলন জমেনি। তারা তরুণ প্রজন্মকে স্বৈরাচারী সরকারের নেগেটিভিটি বুঝাতে সক্ষম হননি! ছাত্রদেরকে তাদের বৈষম্যের বিষয়ে জাগিয়ে তুলতে পারেননি। আম জনতাকে দুর্নীতি ও দু:সাশনের ব্যাখা দিয়ে জাগাতে পারেননি। অন্যদিকে সরকার তাদেরকে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রাজাকার কিংবা রাজাকারের দোসর ট্যাগ দিয়ে সকলকে একসাথে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। বিধায় রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনকে গণবিপ্লবে রুপ দিতে পারেননি ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছিলো কোটা বাতিলের জন্যে। ছাত্রদের আন্দোলন ফ্যাসিস্ট ডাইনির বিরুদ্ধে ছিল না। যার ফলে সরকার তাদেরকে লাই দিয়েছে। পাত্তা দেয়নি। ছাত্ররা ধীরে ধীরে ক্ষুব্ধ হয়েছে। জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে শুরু করেছে। এরপর তাদের আন্দোলন কোটা থেকে গড়িয়ে যায় জুলুমের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকার তখনও বুঝতে পারেনি এই জুলুম নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন অন্যদিকে গড়াতে পারে। তাই তখনও পাত্তা না দিয়ে সেই অভ্যাসবশত অহংকার আর ক্ষমতা দেখিয়ে মাস্তান ছাত্রলীগের কু কু র দের লেলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদের পেছনে। আন্দোলন যখন জুলুম নির্যাতন ও হামলা মামলা বিরোধী তখনও সরকার পাত্তা না দিয়ে লাইসেন্সধারি মাস্তান হারুনদের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে, আর অবৈধ পান্ডা মন্ত্রীদের দিয়ে হুমকি দিয়েছে। ছাত্ররা তখন বুঝতে পেরেছে কিংবা দেশের ডান বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ বুঝিয়ে দিয়েছেন এখন তোমরা দফা-১ এপ্লাই করো। আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। এর আগপর্যন্ত সাধারণ ছাত্রদের পেছনে থেকে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির ও অন্যান্য ইসলামী ছাত্র সংগঠনের ছাত্ররা শক্তি যোগাচ্ছে আন্দোলনের। কিন্তু দফা এক ঘোষণা করতেই এই আন্দোলন আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে যায় গোটা দেশের নির্যাতিত মজলুম মানুষদের মধ্যে। নানাভাবে যারা জুলুমবাজ স্বৈরাচারী হাসিনার আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন তারাও নেমে যান রাজপথে। ছাত্ররা আহবান করে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আলেম ওলামা, সাধারণ মানুষ সকল পেশাজীবিদের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে। বিএনপি ঘোষণা দেয় পাশে থাকবে। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও তারা মাঠে থাকার ঘোষণা দেয়। জমিয়ত, খেলাফত, চরমোনাই সরাসরি মাঠে এসে আন্দোলনে যোগ দেয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষণা দিয়ে তাদের পাশে দাড়ায়। সর্বসাধাণ যুক্ত হয়ে যাওয়ায় সরকার পড়ে যায় বেকায়দায়। ডাকতে শুরু করে ছাত্রদের। বসতে চায় সরকার প্রধান হাসিনা। কিন্তু তখন আর ছাত্রদের পেছনে তাকানোর সময় বাকি থাকেনি। শুরু হয় গণজোয়ার। সাধারণ ছাত্রজনতা ঘোষণা দেয় বঙ্গভবন ঘেরাও করবে। এক সময় এই জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যায় নিকৃষ্টতম খুনি হাসিনার মসনদ। হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। দেশ নতুন করে আবার স্বাধীন হয়। এই বিস্তারিত ঘটনার পর কোনো ছাত্র বা নির্দিষ্টগোষ্ঠী কখনও দাবী করতে পারেনা শুধুমাত্র ছাত্রদের আন্দোলন আর ত্যাগে ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন হয়েছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করে, হাজার শহীদ আলেমের ত্যাগ অস্বীকার করে শুধুমাত্র আন্দোলনকারী ছাত্রদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে কোনো সরকার গঠন করলে বে-ইনসাফি হবে। ইনসাফভিত্তিক দুর্নীতিমুক্ত একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই দেশের আপামর জনতার হৃদয়ের চাওয়া। আপাতত এই পর্যন্ত... ইকবাল হাসান জাহিদ বিভাগীয় সম্পাদক দৈনিক জালালাবাদ