Sunday 22 December 2024
2024-08-06 | বাংলাদেশ ,রাজনীতি | Latest Bengal Today | Views : 184
নিউজ ডেস্ক, লেটেস্ট বেঙ্গল টুডে:এক অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। গত এক মাস যাবত বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। শুরু হয়েছিল চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলন দিয়ে। শেষপর্যন্ত সেটা পরিনত হয় এক দফা দাবীতে; সেই দাবী ছিল সরকারের পদত্যাগ। শেষপর্যন্ত সেটাই ঘটেছে অসংখ্য মানুষের হতাহতের বিনিময়ে। ভারত বৈদেশিক নীতি সবসময় পঞ্চশীল নীতিতে বিশ্বাস করে। তার মধ্যে অন্যতম হল একে অপরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক অ-আগ্রাসন, একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পারস্পরিক অ-হস্তক্ষেপ ও পারস্পরিক সহাবস্থান। কিন্তু মানবাধিকারের প্রশ্নে, মানব সমাজের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে আমাদের অবশ্যই গর্জে উঠতে হবে। সেই নিপীড়িত, অত্যাচারিতদের প্রতি সংহতি জানাতেই হবে। এটা আমাদের নৈতিক কর্তব্য। সেখ হাসিনার সরকার যেভাবে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে মোকাবিলা করলো, সেটা একেবারই কাম্য ছিল না। এটা অনেক সংবেদনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যেত। কিন্তু যে নৃশংসতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের মোকাবিলা করেছে, সেটা বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তার ফলে সারা বাংলাদেশ জুড়ে একটি গৃহযুদ্ধের আবহ তৈরি হয়ে গেছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে। বাংলাদেশের আপামর জনগণকে আমাদের আবেদন, আইন হাতে তুলে নেবেন না। শান্তিপূর্ণ গণ-অভ্যুত্থান করে দেশ গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হন। মনে রাখতে হবে, একটি দেশে কোন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে তার আঁচ প্রতিবেশী দেশের ওপরও পড়ে। বাংলাদেশে যেসকল সংখ্যালঘু, প্রান্তিক শ্রেণির মানুষজন আছেন তাদের পাশে নিয়ে সংহতি ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এই আন্দোলনের ফাঁকে কেউ যেন তাদের ওপর হামলা, অত্যাচার না নামিয়ে আনে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরী। আমরা সমগ্র ছাত্রসমাজ, সুশীল সমাজ সহ আপামর জনগণকে আহ্বান জানাই, স্বৈরাচারী সরকারকে পতন করে যে বিজয় আপনারা হাসিল করেছেন তাকে বজায় রাখতে শান্তি, সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনা ভীষণ জরুরী। আমরা চাই বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দ্রুত ফিরে আসুক। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক। এই গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ছিল দেশে প্রায় দেড় দশক ধরে নির্বাচন না হওয়া। নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ তাঁর গণতান্ত্রিক মতামত দিতে পারেননি। নির্বাচনের মাধ্যমে সেখানে শুধু প্রহসন হয়েছে। এই প্রহসন যদি না হত, তাহলে জনরোষের এই অগ্নুৎপাত হয়তো হত না। এখন বাংলাদেশের জনগণের কর্তব্য দেশের সংবিধানের প্রতি, আইন-শৃঙ্খলার প্রতি আস্থা রাখা। তাদের উচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর চাপ বজায় রেখে যাতে শীঘ্রই দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যায় সেটা সুনিশ্চিত করা। কারণ দেশে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ভীষণ জরুরী। এটা ঐ দেশের জন্য, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জন্য, সর্বোপরি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য আশু প্রয়োজন। যে সকল ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ ঐ দেশে নানান কারণে বসবাস করছেন, তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব আন্দোলনকারীদের নিতে হবে। গতকাল থেকে কিছু বিচ্ছিন্ন, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও দেখা যাচ্ছে, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনাস্থল রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছেন। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এই কাজটা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের এই সংকটকালীন সময়ে আমরা ঐ দেশের পাশে আছি। পরস্পরের পাশাপাশি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা আমাদের একান্ত কর্তব্য।